স্পোর্টস ডেস্ক:
কী নির্মম পরিহাস! করোনাপরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিল- সকালে রাজা তো তুমি বিকালে ফকির। বাংলাদেশ ঘরের মাটিতে যে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গেল সেই দুটি দলই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠেছে। অথচ বাংলাদেশ ৫টার প্রতিটিতে হেরে বিমান ধরেছে। লিটন, তাসকিন, মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকের অবশ্য এখনো শপিং এবং ঘোরাঘুরি চলছে দুবাইয়ে। ৩-৪ মাস ধরে তারা বায়ো বাবলে। স্বাভাবিক
একটু রিলাক্স হতে চাইছেন। সেমিফাইনালে ১০ নভেম্বর ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হবে আবুধাবিতে। আর পরের দিন পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়ার ফাইনালে ওঠার লড়াই। বাংলাদেশই শুধু নয়। আত্মবিশ্বাসের ফানুস উড়িয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল ভারতও। তবে এ দুদলকে নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। আর দুটি দলের ভরাডুবির কারণ বেশ কাছাকাছিই ও একই!
ভারতের সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে তারা প্রায় এক মাসের মতো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছে। ১৫ অক্টোবর শেষ হয় খেলা। আবার বিশ্বকাপ শুরু হয় ১৭ অক্টোবর। ভারতের খেলোয়াড়রা বিশ্রাম পাননি। তারা বায়ো বাবল যন্ত্রণায় ছিল আর ক্লান্ত দলটি পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে উড়ে যায় ১০ উইকেটে। অথচ সবাই দাবি করেছিলেন, বিশ্বকাপের আগে আইপিএল ছিল প্রস্তুতির বড় মঞ্চ। আইসিসি বরাবর যেমন পিচ বানায় বিশ্বমঞ্চে, তেমন পিচ এবার ছিল। স্পোর্টিং উইকেট বানানো হয়। ফলে যে দলের আগ্রাসী বোলার ও পরীক্ষিত পেসার ছিল. তারাই সফল হয়েছে। ভারতের বোলাররা এই বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচে একেবারে ব্যর্থ হয়। পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে নির্বিষ ছিলেন তারা। আর সর্বনাশ সেখানেই হয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে যাওয়ায় ভারতের বিশ্বকাপ কাগজ-কলমে না হলেও মূলত শেষ হয়ে গিয়েছিল। দলের রিসোর্স ছিল। কিন্তু সেটি কাজে লাগানো যায়নি। যে চারটি দল সেমিফাইনালে উঠেছে সবারই চৌকস বোলার রয়েছে। ভারতের সেমিফাইনালের আগে বিদায়ে মনে হচ্ছে আইপিএল ও বোলারদের নির্বিষভাবই কারণ। এখন পরের ম্যাচগুলোয় ঘুরে দাঁড়িয়ে লাভ হয়নি। কারণ প্রথম দুটি দলই কোয়ালিটি সম্পন্ন ছিল।
বাংলাদেশের যে বোলাররা মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আগস্টেও ভয়ঙ্কর ছিলেন। সেই বোলাররা বিশ্বকাপে সেভাবে প্রভাব ফেলতে পারলেন না। এর কারণ অবশ্য পিচ। বাংলাদেশ সফলতার আশায় স্পিনবান্ধব হিসেবে তৈরি করে। কিন্তু সবচেয়ে হতাশার বিষয়, বাংলাদেশের স্পিনাররা বিশ্বকাপে সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি।
ভারত ও বাংলাদেশ একই সুতোয় একটি জায়গায়। আর সেটি হচ্ছে ‘ভুল আত্মবিশ্বাস’। ভারত ভেবেছিল- আইপিএলে সবাই খেলছে। এটিই আদর্শ প্রস্তুতি। কিন্তু অন্য দলের খেলোয়াড়রাও (পাকিস্তান বাদে) এই আসরে খেলেছে। তারা ভারতের সম্পর্কে খুব ভালো করেই জানত। নিউজিল্যান্ডের বেশিরভাগ খেলোয়াড় আইপিএলে খেলেন।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন নতুন করে দল গঠন করবে ভারত ও বাংলাদেশও। বিরাট কোহলি অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন। দলে পরিবর্তন আসবে সামনে। যেমনটি বাংলাদেশে আসছে। এখনো বোধোদয় হলে সামনে ভালো কিছু হতেও পারে। মনে রাখতে হবে- চ্যালেঞ্জ আসবে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের কাছ থেকেই।